খুলনা, বাংলাদেশ | ৩রা বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৬ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ বাছাই: স্কটল্যান্ডকে ৩৪ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ
  জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক হুইপ ও খুলনা-১ সাবেক সংসদ সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
  ১১৮ বারের মত পেছালো সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার প্রতিবেদন

শ্যামনগরে খোলপেটুয়া নদীর চর দখল করে চলছে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

স্থানীয় প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার নওয়াবেঁকী বাজার সংলগ্ন এলাকায় খোলপেটুয়া নদীর চর ভরাট করে চলছে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ। নদীর চরে অবৈধ পাকা স্থাপনা নির্মাণ কাজ বন্ধের নির্দেশনা সম্বলিত সাইনবোর্ড লাগানো থাকলেও তা মানছে না কেউ।

অবৈধ এই দখল প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ ও ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, সম্প্রতি খোলপেটুয়া নদীর মধ্যে নওয়াবেঁকী বাজারের মৎস্য আড়ৎদাররা ১৫০ থেকে ২০০ ফুট জায়গা জুড়ে চর ভরাট করা হয়েছে। নদীর এই জায়গা দখল করে সেখানে আড়ৎ নির্মাণের ছক আকছেন তারা। শুধু মৎস্য আড়ৎদাররাই নয়, নওয়াবেঁকী বাজারের খোলপেটুয়া নদী সংলগ্ন এলাকা জুড়ে চলছে নদী দখলের এই প্রতিযোগিতা। নদী দখল করে কে কার আগে স্থাপনা নির্মাণ করবেন, তা নিয়ে চলছে দফারফা। কেউ নদীর বাঁধে, কেউ নদীর জেগে উঠা চরে গড়ে তুলছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ পাকা ভবন। দখলকারীদের এমন প্রতিযোগিতা প্রকাশ্যে চলতে থাকলেও সংশ্লিষ্টরা নির্বিকার।

খোলপেটুয়া নদীর চর দখল করে স্থাপনা নির্মাণের বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, প্রশাসনের লোকজন এসে দেখার পর কয়েকদিন কাজ বন্ধ থাকে। কিন্ত রহস্যজনক কারণে কিছুদিন পর আবারো শুরু হয় ভবন নির্মাণের কাজ। এমন চোর-পুলিশ খেলার মাঝেই নদীর চর দখল করে গড়ে উঠছে একের পর এক অবৈধ স্থাপনা। বিশেষ করে গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে স্থানীয় একাধিক ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ। তারা প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে অবৈধ এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় সংবাদ কর্মী মনিরুজ্জামান জুলেট বলেন, খোলপেটুয়া নদী দিন দিন প্রভাবশালী ও ব্যবসায়ীদের দ্বারা দখল হয়ে যাচ্ছে। এতে নদীর গতিপ্রবাহ থেমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। খোলপেটুয়া নদী রক্ষায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের উদ্যোগ গ্রহণ করলেও তা কখনোই বাস্তবায়ন হয়নি। এতে ধীরে ধীরে খোলপেটুয়া নদী গিলে খাচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী ও ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় ছফিরুন্নেছা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক জি এম নাসির উদ্দীন বলেন, নদী আইনে বলা হয়েছে নদী দখল, অবকাঠামো নির্মাণ, মৎস্য চাষ, নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কর্মকান্ড ফৌজদারি অপরাধ বলে গণ্য হবে। অথচ প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে খোলপেটুয়া নদী দখল করা হলেও স্থানীয় প্রশাসন দখলকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।

স্থানীয় বাসিন্দা আল হেলাল বলেন, ঈদের লম্বা ছুটিতে নওয়াবেঁকী বাজারের পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা ও খোলপেটুয়া নদীর চর দখলের হিড়িক পড়েছে। নওয়াবেঁকী বাজারের খাস জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে স্থায়ী দোকানঘর।

এ বিষয়ে নওয়াবেঁকী বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি বলেন, আমি বারবার নিষেধ করার সত্ত্বেও নির্দেশ অমান্য করে পাকা ঘর নির্মাণ করছেন অনেকে। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি)-এর নির্দেশে নদীর চরে ও বাজারে অবৈধ পাকা স্থাপনা নির্মাণের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা সংবলিত সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, নওয়াবেঁকী বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে নওয়াবেঁকী বাজারের একটি সিন্ডিকেট এই অবৈধ স্থাপনা তৈরি ও নদী দখলের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। তারা মোটা অংকের টাকা নিয়ে প্রশাসন এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করে এসব অবৈধ স্থাপনা তৈরি সুযোগ করে দিচ্ছেন।

এদিকে, দিনের আলোতেই প্রভাবশালীরা নদী দখলের উৎসব চালালেও নজরে আসছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। অবৈধ পার্কা স্থাপনা নির্মাণের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা সংবলিত সাইনবোর্ড টানানো হলেও নির্মিত স্থাপনা অপসারণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

স্থানীয়রা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, দু’দিন পর ওই সাইনবোর্ড আর থাকবে না, আবার কাজ শুরু হবে। এসব সাইনবোর্ড লোক দেখানো মাত্র।

এ বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছাঃ রনী খাতুন বলেন, আমি বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। এছাড়াও নওয়াবেঁকী বাজারে সকল প্রকার পাকা অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরপরও যদি কেউ কাজ করে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!